মডিউল - ৬
যৌনবাহিত ও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ
যৌনবাহিত ও প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ
যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে একজন থেকে অন্যজনের মধ্যে যেসব সংক্রমণ ছড়ায় সেগুলোই “যৌনবাহিত সংক্রমণ”।
যৌন সম্পর্ক (যৌনবাহিত সংক্রমন) ছাড়াও
- সংক্রমিত রক্ত/ রক্তজাত দ্রব্যাদি গ্রহন,
- সংক্রমিত সূঁচ/যন্ত্রপাতি ও
- আক্রান্ত মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমন হতে পারে।
প্রজনন অঙ্গসমূহে সংক্রমনকে ’প্রজননতন্ত্রের সংক্রমন’ বলে।
- সকল যৌনবাহিত সংক্রমনই প্রজননতন্ত্রের সংক্রমনের আওতায় পড়ে।
প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ ও যৌনবাহিত রোগের কারণ
- ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা: ব্যক্তিগত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে, যেমন: মাসিকের প্যাড বা কাপড় অপরিষ্কার বা জীবাণুযুক্ত হলে বা সহবাসের পর যৌনাঙ্গ পরিষ্কার না করলে, মেয়েরা মলত্যাগের পর নিচ থেকে উপরের দিকে পরিষ্কার না করলে (কারণ, এতে জীবাণু যোনিমুখে চলে আসে), অপরিষ্কার অন্তর্বাস পরলে এসব সংক্রমণ হতে পারে।
- প্রজননতন্ত্রের জীবাণুগুলোর অতিবৃদ্ধি: প্রজননতন্ত্রে (স্ত্রী) স্বাভাবিকভাবেই কিছু জীবাণু থাকে, এই জীবাণুগুলোর অতিরিক্ত বৃদ্ধির ফলে প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ হতে পারে। এগুলো প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ যা যৌনবাহিত নয়, যেমন - ক্যানডিডিয়াসিস/মোনিলিয়াসিস, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস ইত্যাদি।
- অনিরাপদ যৌনমিলন: বিশ্বস্ত সঙ্গী ছাড়া বা একাধিক সঙ্গীর সাথে কনডম ছাড়া যৌনমিলন করাকে অনিরাপদ যৌনমিলন বলে এবং এতে যৌন সংক্রমণ হতে পারে। যেমন: এইডস, গনোরিয়া, সিফিলিস ইত্যাদি।
- জীবাণুযুক্ত পরিবেশ: তলপেটের সংক্রমণ যা প্রসবকালে/গর্ভপাতের সময় বা অন্য কারণে হতে পারে। গর্ভপাতের জন্য অনেকেই গাছের শিকড় বা অন্যান্য প্রাকৃতিক জিনিস ব্যবহার করে থাকে। এগুলো ব্যবহার করলে জীবাণু সংক্রমণসহ মৃত্যুর ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি। জীবাণুযুক্ত সিরিঞ্জ, অন্যের ব্যবহার করা ক্ষুর, বেøড বা কাঁচি ব্যবহার করলেও এ ধরনের সংক্রমণ হতে পারে। যেমন - এইডস, সিফিলিস ইত্যাদি।
- সংক্রমিত রক্তগ্রহণ: রক্তগ্রহণের মাধ্যমে, যেমন: সংক্রমিত লোকের রক্ত যদি কোনো পরীক্ষা ছাড়া নেয়া হয়, তাহলে হেপাটাইটিস বি, সি এবং ডি, সিফিলিস, এইডস হতে পারে। এগুলো হলো যৌনবাহিত রোগ।
- সংক্রমিত মায়ের গর্ভধারণ: মা সংক্রমিত হলে তার থেকে বাচ্চা পেটে থাকা অবস্থায়, বাচ্চার জন্মের সময়/জন্ম হওয়ার পরেও এই রোগের সংক্রমণ হতে পারে। যেমন: এইডস, সিফিলিস, গনোরিয়া।
যৌনরোগের বা প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণের সাধারন লক্ষণসমূহঃ
- যৌনাঙ্গে চুলকানি হওয়া
- যৌনাঙ্গ থেকে দুর্গন্ধযুক্ত বা দুর্গন্ধবিহীন স্রাব যাওয়া
- যৌনাঙ্গ থেকে পুঁজ বা পুঁজের মতো যাওয়া ও বার বার প্রস্রাব হওয়া
- যৌনাঙ্গে ক্ষত হওয়া;
- যৌনমিলনে ব্যাথা হওয়া;
- শরীরে চুলকানি বা ঘামাচির মত দানা হওয়া;
- শরীরে লসিকা গ্রন্থি (কুঁচকি বা অন্যান্য স্থানে গুটি হওয়া)
- অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যৌনরোগের লক্ষণ বোঝা যায় না। বিশেষ করে ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের এই লক্ষণগুলো অপ্রকাশিত থাকে। তাই চিকিৎসা নিতে তারা অনেক দেরি করে ফেলে, যা থেকে জটিলতাও হতে পারে।
প্রজননতন্ত্রের বা যৌনরোগের জটিলতাসমূহ
- এইচআইভি সংক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়;
- হিউম্যান প্যাপিলমা ভাইরাসে (এইচপিভি) আক্রান্ত নারীদের জরায়ুর মুখে ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা থাকে;
- সংক্রমিত নারী বা পুরুষের পরবর্তীতে স্থায়ী বন্ধ্যাত্ব হতে পারে;
- মস্তিষ্ক, যকৃত বা হৃৎপিন্ডে জটিলতা দেখা দিতে পারে;
- সংক্রমিত পুরুষের মূত্রনালী সরু হয়ে যেতে পারে;
- আক্রান্ত মায়ের গর্ভপাত হতে পারে বা মৃত সন্তান প্রসব করতে পারে;
- আক্রান্ত মায়ের জরায়ুর পরিবর্তে ডিম্বনালীতে ভ্রূণ বড় হতে পারে;
- আক্রান্ত মায়ের শিশু জন্মগত ত্রুটি নিয়ে বা চোখে ইনফেকশন নিয়ে জন্ম নিতে পারে, যা থেকে পরবর্তীতে অন্ধত্বও হতে পারে।
কিশোর-কিশোরীদের যৌনবাহিত সংক্রমণ ব্যবস্থাপনা
- বর্তমানে যৌনবাহিত সংক্রমণে আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীরা প্রাপ্তবয়স্কদের মত একই ব্যবস্থা পাচ্ছে। যদিও কিশোর-কিশোরীদের বিশেষ কিছু প্রয়োজন আছে এবং রোগ নির্ণয় ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্কদের চাইতে কঠিন।
- মূল চ্যালেঞ্জ হলো সংক্রমিত ব্যক্তি বিশেষকে চিহ্নিত করা ও তাকে চিকিৎসা করে ভাল করে তোলা, যাতে সে আর অন্যকে সংক্রমিত করতে না পারে।
- আদর্শ হলো ঝুঁকি নির্ণয় কৌশল অবলম্বন করে বাছাইকরণ (Screening) পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাসঙ্গিক ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা প্রদান করা।
এইচআইভি ও এইডস
- পৃথিবীতে দিন দিন এইচআইভি মহামারী আকার ধারণ করছে। এর প্রকোপ
- কম বয়সী,
- তুলনামূলকভাবে দরিদ্র এবং
- নারীদের মধ্যে বেশি দেখা যাচ্ছে
- সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর (যেমনঃ শিরায় মাদকসেবী, যৌনকর্মী ইত্যাদি) মধ্যে বেশিরভাগই কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী।
- তাই কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতীরাই হলো মূল জনগোষ্ঠী যাদেরকে উদ্দেশ্য করে এইচআইভি প্রতিরোধ কার্যক্রম চালানো উচিত।
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে কীভাবে এইচআইভি প্রতিরোধ করা যায়
- ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চললে;
- বিবাহবহির্ভূত যৌনমিলন থেকে বিরত থাকলে;
- স্ত্রী বা সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ত থাকলে;
- যৌনমিলনে সবসময় কনডম ব্যবহার করলে;
- কেবলমাত্র অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক থেকে এইচআইভি পরীক্ষিত রক্ত গ্রহণ করলে;
- যেকোনো ধরনের ড্রাগ ব্যবহার থেকে বিরত থাকলে: শিরায় মাদক গ্রহণকারীর যে কোনো ধরনের সুইজাতীয় (সিরিঞ্জ) ভাগাভাগি করা থেকে বিরত থাকলে; যেকোনো ধরনের যৌনবাহিত সংক্রমণ/ প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ পরীক্ষা করতে হবে এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।