মডিউল - ৬
পরীক্ষা-ভীতি ব্যবস্থাপনা, জীবন দক্ষতা
ও
প্যারেন্টিং
পরীক্ষাভীতি
পরীক্ষা সম্বন্ধে একটা সাধারণ ভয় বা চিন্তা সবার মনে বিরাজ করে যা পরীক্ষার জন্য প্রয়োজন, তবে অতিরিক্ত পরিমান ভয় ছাত্রছাত্রীর জন্য পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণে এবং কাঙ্খিত ফলাফল অর্জনের পথে সমস্যা তৈরি করতে পারে। এই ভয় পরীক্ষার্থীর জন্য এমন ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি করে যে পরীক্ষার কথা শুনলেই সে নানা রকম শারীরিক, মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে থাকে যেমনঃ বুক ধড়ফড় করা, প্রচুর ঘাম হওয়া, হাতপা ঠান্ডা হয়ে আসা, বমি বমি লাগা ইত্যাদি।
পরীক্ষাভীতির শারীরিক ও মানসিক উপসর্গসমূহ
- বমি বমি ভাব হওয়া, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমি হয়ে যাওয়া
- খাওয়া দাওয়া করতে না পারা
- বুক ধড়ফড় করা
- মাথাব্যথা করা, মাথা ভারভার লাগা, মাথা ঘুরানো
- চোখে ঝাপসা দেখা
- ঘুম না আসা
- বাস্তবের সাথে সামঞ্জস্যহীনতা
- হঠাৎ করে হাতপা প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে আসা
- ঘনঘন পাতলা পায়খানা হওয়া
- মূর্ছা যাওয়া
- মনোযোগ দিতে না পারা
- অল্পতে একাগ্রতা হারিয়ে ফেলা
- স্মৃতিশক্তিতে সাময়িক ব্যাহত হওয়া
পরীক্ষাভীতির কারণ এবং কাদের হয়?
- বংশগত কারণ
- মস্তিকের জৈবরাসায়নিক পরিবর্তনজনিত কারণ
- শৈশব পর্যায় থেকে শিশুর মানসিক বিকাশে ত্রুটি, যেমন বিভিন্ন ধরনের অসুখী অভিজ্ঞতা, অভিভাবকের ভালোবাসা,সহযোগিতা ও সহমর্মিতার অভাব, সাহস, শৃঙ্খলাবোধের অভাব ইত্যাদি।
- ব্যক্তিত্বের ত্রুটি ছেলেটি বা মেয়েটির শৈশব থেকেই থাকতে পারে, যেমন বদ্ধমূল (Obsessional) বা মৃগীরোগ ব্যক্তিত্বের অধিকারী হলেও এ সমস্ত সমস্যা হতে পারে।
- আর্থসামাজিক কারণ : পিতামাতার বারবার ঝগড়া, পরিবারের সদস্যদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝি , আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি ইত্যাদি।
পরীক্ষাভীতি দূর করার উপায় বা সমাধান
১. পরীক্ষা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য সংগ্রহ করা (Accurate information)পরীক্ষার নির্দিষ্ট তারিখ, সময়সূচি, রুটিন, সিলেবাস ঠিকমত যোগার করে সে অনুসারে প্রস্তুতি নেয়া।
২. পর্যাপ্ত এবং কার্যকরী অনুশীলনসহ পড়াশুনা করা (Effective Studying) প্রতিদিন নিয়মিত পড়া, যেখানে পরীক্ষার সময়সূচী, প্রতিটি পরীক্ষার আগে কতদিন ছুটি, কোন বিষয়টি কঠিন তুলনামূলক বেশিদিন পড়তে হবে, কোনটি সহজ তুলনামূলক অল্পদিন পড়তে হবে সবকিছু উল্লেখ করে পড়ালেখার একটি দৃশ্যমান তালিকা তৈরি করা, বুঝে পড়া মুখস্থ করা, উদাহরণের সাথে পড়ার সংযোগ করে পড়া।
৩. পরীক্ষা উপযোগী পড়াশুনা করা (Exam taking preparation) ভাল ভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য পরীক্ষার সিলেবাস ও পরীক্ষার পূর্বের ক্লাস গুলোর উপর জোর দিতে হবে, পূর্ববর্তী বছরের প্রশ্নপত্রগুলো ব্যাখ্যা করে প্রশ্নের ধরণ বুঝতে হবে, প্রশ্নগুলোর সমাধান করতে হবে।
৪. বন্ধুদের সাথে দলবদ্ধভাবে পড়ালেখা করা (group study with friends) একে অপরকে প্রশ্ন করা, উত্তর দেয়া, সবার সাথে আলোচনা করে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন নির্ধারন করা, একে অপরকে পড়া বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পড়ালেখা করা।
৫. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা (Health lifestyle) পরিমিত ঘুম ৭/৮ ঘণ্টা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, বেশি বেশি পানি পান করা, ব্যায়াম, খেলাধুলা ও বিনোদন টিভি দেখা/গল্প করা এর সাথে জীবনযাপন করা।
৬. মনোভাব উন্নতিকরণ (Attitude upgrading) প্রমেই নির্ধারন করতে হবে দুশ্চিন্তার কারণ কি, এটা কি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবে, না ফলাফল খারাপ হলে অন্যরা কি বলবে এ কারণে যদি অন্যরা কি বলবে এটা দুশ্চিন্তার প্রধান কারণ হয় তাহলে ভাবতে হবে জীবনে পরীক্ষা থাকবেই। পড়াশুনার সাথে পরীক্ষা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। একটি পরীক্ষা কখনই কারো জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা বর্ণনা করে না। পরীক্ষা বিষয় টিকে জীবনের একটি অংশ হিসেবে নিয়ে সাধারনভাবে গ্রহণ করার মানসিকতা অর্জনের চেষ্টা করতে হবে।
৭. দুশ্চিন্তা ও অমূলক ভীতি দূর করার কিছু পদ্ধতি (Anxiety or Phobia reduction techniques) প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করার পর ও যদি দুশ্চিন্তা হয়।
জীবন দক্ষতা
জীবন দক্ষতা হলো এমন কতগুলো দক্ষতা ও ইতিবাচক আচরণ যা ব্যক্তিকে দৈনন্দিন জীবনের ঘটনা ও চ্যালেঞ্জগুলো ফলপ্রসূভাবে মোকাবেলা করতে সহায়তা করে, অন্য কথায় এটা এক ধরণের মনোবৈজ্ঞানিক যোগ্যতা।এগুলো হলো এমন কতগুলো দক্ষতা যা ব্যক্তিকে অন্যের সাথে মিথস্ক্রিয়া ক্ষেত্রে নিজের আবেগগুলো সনাক্তকরণ ও প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে জীবনের সব কিছু মোকাবেলা করতে সহায়তা করে।আমাদের জীবনে জীবন দক্ষতার প্রয়োজনীয়তা আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানবোধ বৃদ্ধি পায় অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় নিজস্ব মতামত প্রকাশের দক্ষতা বাড়ে কমিউনিটি ও সমাজে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারে অন্যের ও নিজের কল্যাণের,ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধি পায় জীবনের নানা ধরনের পরিবর্তন ও চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করার দক্ষতা বাড়ে বন্ধুত্বপূর্ণ ও সুষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ও বজায় রাখতে সহায়তা করে।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ জীবন দক্ষতা হলো:
- সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা (Decision making Skill) : যেমন বিদ্যালয়ের বিষয় নির্বাচন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া,নিজের পছন্দ মত পোষাক বাছাই করা।
- সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem Solving Skill) : যেমন বন্ধুদের সাথে দ্বন্দ্ব নিরসন করতে পারা।
- সৃজনশীল চিন্তন (Creative Thinking) : যেমন নিজের মত করে কিছু লেখা যেমন গল্প, কবিতা। কোন নকশা তৈরি করা, ক্রাফট তৈরি করা ইত্যাদি।
- যৌক্তিক চিন্তন (Logical Thinking) : যেমন কোন কাজ করার আগে ভালমন্দ, ফলাফল বিবেচনা করা।
- ফলপ্রসূ যোগাযোগ (Effective Communication) : যেমন,নিজের প্রয়োজনকে বুঝিয়ে বলা ও পাশাপাশি অন্যের অনুভূতিকে বুঝতে পারা।
- ব্যক্তিগত সম্পর্ক (Interpersonal Relationship) : যেমন সম্পর্ক তৈরি করা ও তাকে রক্ষা করা।
- আত্মসচেতনতা (Self awareness) : নিজের দক্ষতা ও সীমাবদ্ধতাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা।
- সহমর্মিতা (Empath) : কাউকে বিচার না করে তার অনভূতিকে বুঝতে চেষ্টা করা দৃঢ়তার সাথে “না”বলতে পারা (Assertiveness) : যেমন অপ্রত্যাশিত কোন কিছুকে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলা। উদাহরস্বরূপ মাদককে ’না’ বলতে পারা, পরীক্ষার আগের দিন বন্ধু খেলতে ডাকলে তাকে ‘না’ করতে পারা।
- মানসিক চাপ, ট্রমা ও অন্যান্য আবেগের সাথে খাপ খাওয়ানো (Coping with stress; Trauma & loss): যেমন পরীক্ষাকে ভীতি হিসেবে না নিয়ে ভাল প্রস্তুতি গ্রহণের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারা, নতুনপরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানো।
প্যারেন্টিং
প্যারেন্টিং হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যা একটি শিশুকে তার শারীরিক, আবেগীয়, সামাজিক এবং বুদ্ধিগত বিকাশের মাধ্যমে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে পরিণত হতে সহায়তা করে। মূলত প্যারেন্টিং হলো জৈবিক সম্পর্কের সূত্র ধরে শিশুকে লালনপালন করা। কিশোর বয়সের পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ানোর ক্ষেত্রে প্যারেন্টিংয়ের ভূমিকা কিশোর বয়সকে বিবেচনায় নিলে শুধ যে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি, শারীরিক গঠন, আবেগীয় ও বুদ্ধিগত পরিবর্তন হয় তা না বরং এই সময়ে পরিবারের মধ্যে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব ও উত্থানপতন দেখা যায়। কিশোরদের সম্পর্কে বড়দের অনেক নেতিবাচক ধারনা থাকলেও তারা কর্মোদ্যোগী, চিন্তাশীল এবং আদর্শবাদী। যদিও এই সময় বাবামা ও সন্তানের মধ্যে অনেক ধরনের দ্বন্দ্বের তৈরি হয়, যথাযথ প্যারেন্টিং তাদেরকে সুষ্ঠভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। প্যারেন্টিং কিভাবে সহায়তা করবে নিচে তা নিয়ে আলোচনা করা হলো।সন্তানের কিশোর বয়সকে বিবেচনায় নেয়া যেহেতু প্রতিটি মানুষ আলাদা তাই কিশোর বয়সের শারীরিক, মানসিক, বুদ্ধিগত এবং আচরণগত পরিবর্তনগুলো একই সময়ে হয় না। কারো ক্ষেত্রে আগে হয়, কারো ক্ষেত্রে ধীর গতিতে হয়। সন্তানরা এই বয়সে নিজের বাহ্যিক রূপ এবং বিভিন্ন ভাবে নিজেকে পরিচিত করাতে চায়, নিজেকে সমবয়সীদের থেকে আলাদাভাবে উপস্থাপন করার প্রতি মনযোগী হয়। সাধারত এই বিষয়গুলোই বাবামা ও সন্তানের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করে। বাবামায়েরা যদি এই পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সজাগ এবং সচেতন থাকেন তাহলে সন্তানদেরকে এই পরিবর্তনগুলোর সাথে খাপ খাওয়াতে সহায়তা করতে পারবেন।
মতামত প্রদানের সযোগ দেয়া
যেহেতু কিশোর কিশোরীরা বড় হতে শুরু করে তাই তাদের যৌক্তিক এবং সৃজনশীল চিন্তা করতে শুরু করে। তাই তারা পূর্বে যে সিদ্ধান্তগুলোকে মেনে নিত সেগুলোতে নিজের মতামতকে জোরালোভাবে প্রকাশ করতে শুরু করে। এই হঠাৎ পরিবর্তনগুলো বাবামায়ের মনে শংকার তৈরি করে। এসময় বাবামায়েরা তাদের নিজেদের ও সন্তানের ব্যাপারে আরো গভীর ভাবে ভাবা দরকার। নিজেকে নিজে কিছু প্রশ্ন করা যেতে পারে
- আমি কি আমার সন্তানকে মাত্রাতিরিক্ত নিয়ন্ত্রন করতে চাই?
- আমি কি আমার সন্তানের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছি?
- আমি কি আমার সন্তানকে আমার থেকে ভিন্ন মতামত এবং চিন্তা প্রকাশের সুযোগ দিচ্ছি?
- খোলামেলাভাবে কথা বলার পরিবেশ তৈরি করা
এই বয়সে কিশোর কিশোরীদের মনে তাদের নিজেদের সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়। প্যারেন্টিংয়ের মাধ্যমে খোলামেলা পরিবেশ সৃষ্টি করা এবং তাদের মনে জমে থাকা প্রশ্নগুলো করার সুযোগ দেয়া। প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা থাকলে তা শেয়ার করা আর না জানা থাকলে যথাযথ ব্যক্তির কাছ থেকে জানার ব্যবস্থা করা। যেমনঃ বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যক্তি বা বন্ধু অথবা বিশেষজ্ঞ।
সন্তানকে তার মতো করে বোঝা
নিজেকে সন্তানের জায়গায় রেখে তার চিন্তা ও অনুভূতিগুলোকে বুঝতে চেষ্টা করা এবং তার পরিস্থিতিটা তার মতো বোঝা। এই বয়সে যে এই ধরনের অনুভূতি হতে পারে তা বিবেচনায় নেয়া এবং তাদের প্রতি সহমর্মিতার সাথে আচরণ করা।
সম্মানের প্রত্যাশা করা
প্যারেন্টিংয়ের ধরন এমন হবে যে যা সন্তানদের সহায়তা করবে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে, প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি মেনে চলতে। তবে বাবামায়েরা অবশ্যই নমনীয় হবে, কঠোর হবে না, মতামত প্রকাশে সুযোগ দিবে। বাবামায়েদের আচরণের মাধ্যমে এটা প্রকাশ করতে হবে যে তারা তাদের কাছ থেকে সম্মান এবং নিয়মনীতি পালনের প্রত্যাশী।
সন্তানের প্রতি প্রত্যাশিত আচরণ নিজেও প্রদর্শন করা
আমরা সন্তানের প্রতি যে ধরনের আচরণ আশা করি একজন বাবামা হিসেবেও আমাদের ঠিক সে ধরনের আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। বাবামা তাদের কাছে একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হবেন। যেমনঃ আমরা তার প্রতি সম্মান প্রত্যাশী হলে আমরা তার প্রতি ও অন্যান্যদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবো।
শিশুদের নেতিবাচক আচরণের কারণ
- শিশুদের ইচ্ছেমতো কাজ করতে না দিলে
- কাজের স্বীকৃতি না দিলে
- খেলার সুযোগ না পেলে
- নেতিবাচক পরিবেশের মধ্যে বেড়ে উঠলে
- সহযোগিতা না পেলে বা কম পেলে
- অসুস্থ থাকলে
- প্রাকশৈশবকালীন কোন বিশেষ অসুস্থতা থাকলে
- সঠিক চিকিৎসা বা পরিচর্যা না পেলে
- শিশুর পছন্দের গুরুত্ব না দিলে
- ঝগড়া, মারামারি, হিংসা ও বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশে মানুষ হলে
- শিশুকে শাস্তি, অতিরিক্ত চাপ বা মানসিক অশান্তি দিলে
- শিশু পারিবারিক মূল্যবোধ বা সামাজিক শিক্ষা না পেলে
বয়ঃসন্ধীকালীন সময়ে সন্তানদের প্রতি বাবামার দোষারোপ বা হুমকিমূলক আচরণ
বয়ঃসন্ধীকালীন সময় একটি শিশুর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর। এই সময় তাদের আচরণের বিশেষ পরিবর্তনদেখা যায়। তাদের শারীরিক পরিবর্তনের কারণে মানসিক অস্থিরতা দেখা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা নিজেরা আসলে কি তা নিয়েই সন্দিহান থাকেন। সতরাং এই সময় সন্তানদের প্রতি বিশেষ যত্ন নেয়া, তাদের সাথে সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখা বাবামার নৈতিক দায়িত্ব, অন্যথায় তাদের আচরণের উপর নেতিবাচক প্রভাব পরে। অর্থাৎ যদি সন্তানদেরকে কোন কারণে দোষারোপ বা হুমকি দেয়া হয় তাহলে এর প্রভাব সন্তানদের আচরণের উপর দেখা যায় যা ভবিষ্যতে তাদের ব্যক্তিত্বের উপর হুমকিস্বরূপ। যেমন:
সন্তানের আচরণের উপর দোষারোপ বা হুমকির প্রভাব
- আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়
- নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে
- অল্পতেই ধৈর্যহীন হয়ে পরে
- সমাজ সম্পর্কে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়
- নিজের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারা তৈরি হয়
- নিজেকে বিচ্ছিনড়ব করে ফেলে
- সকল ক্ষেত্রে অবিশ্বাস দেখা দেয়
- অসৎ সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে
- ধূমপায়ী বা নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে
- অল্পতেই অস্থির হয়ে পড়ে
- নিজেকে নিষ্কর্মা মনে করে
- অল্পতেই হতাশ হয়ে পড়ে
- মূল্যবোধ ও নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা থাকে না
- সুতরাং, সন্তানদের ব্যক্তিত্বের সঠিক গঠনের ব্যাপারে বাবা মাকে বিশেষ যত্নশীল হতে হবে।
বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে সন্তানদের প্রতি বাবা মার করণীয় আচরণ
- সন্তানদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা
- তাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ‚ সম্পর্ক বজায় রাখা
- তারা যে আমাদের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ‚ তা বোঝানো, এক্ষেত্রে তাদের বন্ধুদের খবর, স্কুলের খবর জানতে চাওয়া ও মনোযোগ দিয়ে শোনার মাধ্যমে তাদের গুরুত্ব বোঝাতে পারি
- এই বয়সে তাদের অনেক বিষয়ে কৌতূহল দেখা যায় যা অনেক সময় বয়স অনুযায়ী প্রাসঙ্গিক নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে রাগ না করে সেসব বিষয় সম্পর্কে সংযতভাবে জানানো
- তাদের বন্ধু বান্ধবদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা, এতে করে সন্তানদের সম্পর্কে অনেক তথ্য জানা যায়
- অনেক সময় বাবা মায়ের মতের সাথে সন্তানদের মতের অমিল হতে পারে, সেক্ষেত্রে সন্তানদের দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে বিষয়বস্তুগুলোকে অনুধাবন করতে হবে
- দিনে কমপক্ষে একবার পরিবারের সকলে মিলে একসাথে সময় কাটানো, এতে করে সন্তান পরিবারের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে।
উপরে উল্লেখিত আচরণগুলো বয়ঃসন্ধিকালীন সময়ে সন্তানদের সুষ্ঠভাবে বেড়ে উঠার জন্য বিশেষভাবে সহায়তা করবে।