Module - 7
মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য মনের এমন এক সাম্যাবস্থা -
- যখন একজন মানুষ তার নিজের সক্ষমতা আর দুর্বলতা বুঝতে পারে,
- দৈনন্দিন জীবনের স্বাভাবিক চাপের সাথে মানিয়ে নিতে পারে, এবং
- সামাজিক রীতিনীতি ও কৃষ্টি মেনে উৎপাদনশীল থাকে ও সমাজে কিছু না কিছু অবদান রাখতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে ,
মানসিক স্বাস্থ্য হল এমন একটি অবস্থা যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজের সম্ভাবনাকে উপলব্ধি করতে পারে, জীবনের দৈনন্দিন চাপ কে মোকাবেলা করতে পারে, উৎপাদনশীলভাবে কাজ করতে পারে এবং তার সমাজে অবদান রাখতে সমর্থ্য হয়। মানসিক স্বাস্থ্যসেবাগুলো হল- কাউন্সেলিং, দলীয় কাউন্সেলিং, পারিবারিক কাউন্সেলিং, শিক্ষা বিষয়ক কাউন্সেলিং।
মানসিক সুস্থতার বৈশিষ্ট সমূহ
মানসিকভাবে সুস্থ একজন ব্যক্তির নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকে না:
- আবেগের নিয়ন্ত্রণ : রাগ, ভয়, দুঃখ, আনন্দ, হিংসা, অপরাধবোধ এবং ভালোবাসা ইত্যদি অনুভূতিগুলো ব্যক্তির নিয়ন্ত্রণাধীন থাকে;
- সক্ষমতা আর দুর্বলতা বুঝতে পারা: নিজস্ব অক্ষমতাকে মেনে নিতে পারে এবং সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে পারে।আত্ম-সম্মানবোধ অটুট থাকে বিভিন্ন ধরনের পরিস্থিতির সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে পারে, অন্যের সাথে দীর্ঘস্থায়ী এবং ফলপ্রসু সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে
- সমাজে অবদান রাখা : সমাজে নিজেকে একজন কার্যকরী এবং গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসাবে অনুভব করতে পারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকে ব্যক্তিগত, সামাজিক এবং পেশাগত সর্ম্পকের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল থাকে
কৈশোরে মানসিক সমস্যা
ক) ঘুমের সমস্যা (Sleep Problem)
খ)মলমূত্র ত্যাগজনিত সমস্যা (Elimination Disorder)
গ) বিচ্ছিন্নতার ভয় (Separation Anxiety)
ঘ) অতি চঞ্চল অমনোযোগিতা (Attention Deficit, Hyper Activity Disorder)
ঙ) আচরণগত সমস্যা (Behavioral Problem)
চ) অটিজম বা অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার
ছ) বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতা (Intellectual Disability)
মাদকাসক্তি
এটি একটি ‘ক্রনিক রিল্যাপ্সিং ব্রেইন ডিজিজ’ বা পুনরায় হতে পারে এমন দীর্ঘমেয়াদি মস্তিষ্কের রোগ। ক্রমাগত মাদক নিতে নিতে এক পর্যায়ে ব্যক্তিটি পুরোপুরি মাদকনির্ভর হয়ে পড়ে ও মাদক ছাড়া চলে না। এই অবস্থাই হচ্ছে মাদকে আসক্তি।
মাদকাসক্তির কারণ
- মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা
- মাদকদ্রব্য সমন্ধে কৌতূহল
- বন্ধুদের চাপে পড়ে মাদক গ্রহণ
- হতাশা, ব্যর্থতার কাটাতে মাদক গ্রহণ
- পারিপার্শ্বিক পরিবেশের প্রভাব
- নিছক আনন্দের জন্য
মাদকাসক্তির লক্ষণসমূহ
মাদকাসক্তির পরিণতি
- ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকান্ড ব্যাহত হয়
- বিভিন্ন ধরনের শারীরিক রোগ যেমন- লিভার, কিডনী, ব্রেইন ইত্যাদি অঙ্গের রোগ হতে পারে এমনকি মৃত্যু হতে পারে এমন রোগেও আক্রান্ত হয় যেমন- এইডস্, হেপাটাইটিস ইত্যাদি
- ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যহানী হতে থাকে (ওজন অতিরিক্ত কম বা বেশী হতে পারে)
- যৌন সমস্যা যেমন যৌন অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা হয়
- গর্ভকালীন সময়ে মাদকাসক্তি হলে গর্ভস্থ বাচ্চার ক্ষতি হয়
- ফুসফুস, খাদ্যনালী, পাকস্থলী ইত্যাদির ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে
- অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়া
- লেখাপড়া ও পেশাগত কাজে পিছিয়ে পড়া
- সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া
- আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়া
- মানসিক চাপে ভোগে ও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়
মাদকাসক্তি প্রতিরোধ
- সহজলভ্যতা কমানো
- সুশৃঙ্খল পারিবারিক বন্ধনে সহায়তা করা।
- স্থানীয় পর্যায়ে তরুরদেও মধ্যে মাদকের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি
- ধর্মীয় ও নৈতিক অনুশাসন মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ করা
- খেলাধুলা ও সুস্থ বিনোদনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা
- দ্রুত মাদকাসক্তি সনাক্ত করণ ও চিকিৎসার জন্য প্রেরন করা।
পরিবারের সহযোগিতা:
- সন্তান এর দৈনন্দিন কার্যক্রম ও গতিবিধি সম্পর্কে সচেতন থাকা।
- মাদকাসক্তের চিকিৎসায় পরিবারের সহযোগিতা, ভালোবাসা, পাশে থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
- কিছু বিষয় পরিবারকে মেনে চলতে হয়। যেমন: রোগীকে আগের দিনের আসক্তির বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করে কথা না বলা। মনে আঘাত দিয়ে কথা না বলা।