কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য
১. কিশোর-কিশোরীরা কী কারণে বিষন্নতায় ভোগে?
উত্তর: কোন কিছুতে আনন্দ বা উৎসাহ না পাওয়ার যে অবস্থা সহজভাবে তাকে বিষন্নতা বলে। কৈশোরকালে যে সমস্ত মানসিক সমস্যা হয় তার মধ্যে বিষন্নতা বা ডিপ্রেশন সবচেয়ে বেশি হয়। এটা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন যে ঠিক কি কারণে বিষন্নতা হয়, তবে সাধারণভাবে কতগুলো কারণকে এর পিছনে দায়ী বলা যেতে পারে। যেমন:
-
- মা-বাবা বা আত্মীয়স্বজন, শিক্ষক, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে যদি অসম বা বৈষম্যমূলক ব্যবহার পেয়ে থাকে
- শারিরীক বা যৌন নিপীড়নের মুখোমুখী হলে
- সামাজিকভাবে কেউ যদি আলাদা থাকে
- নিরাপত্তাহীনতা বা একাকীত্ব
২. বিষন্নতার ফলে কিশোর-কিশোরীরা কি ধরনের সমস্যায় ভোগে?
উত্তর: বিষন্নতার ফলে কিশোর-কিশোরীদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে। এটা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম হতে
পারে। যেমন-
-
- সবসময় নেগেটিভ চিন্তা করা বা নেগেটিভভাবে সবকিছুকে দেখা
- কোন কিছুতেই ভালো না লাগা, আশা দেখতে না পারা
- অল্পতেই রেগে যাওয়া
- অবসাদ ও দুর্বল লাগা
- পড়াশুনায় অমনযোগী হওয়া, স্কুলে যেতে ভালো না লাগা
- বন্ধুদের সাথে মিশতে ভালো না লাগা
- শখের বা ভালো লাগার কাজ করতে ভালো না লাগা
- খাওয়া কমে যেতে পারে বা বেড়ে যেতে পারে ফলে ওজন কমেও যেতে পারে আবার বেড়েও যেতে পারে
- ঘুম না হওয়া, ঘুমের ঔষধ খাওয়া
- আত্মহত্যার চেষ্টা করা বা চিন্তা করা
- হাত পা কাটা
- আত্মবিশ্বাস কমে যায়
- নিজেকে ছোট মনে করা
- নেশাজাত দ্রব্যে আসক্তি
৩. কিভাবে বিষন্নতা থেকে নিজেকে দুরে রাখা যায়?
উত্তর: বিষন্নতা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বড় বিষয় হলো নিজের চেষ্টা। প্রয়োজনে চিকিৎসা লাগতে পারে। কিশোর-কিশোরীদের ডিপ্রেশন থেকে মুক্তির জন্য যে বিষয়গুলো সহায়ক হতে পারে তাহলো-
-
- রুটিন মাফিক চলা অর্থ্যাৎ দৈনন্দিন কার্যক্রমকে একটা রুটিনের মধ্যে করা
- লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা, ডিপ্রেশন যেহেতু কাজ করতে ইচ্ছা করে না। তাই প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে
- সুষম খাদ্য গ্রহণ করা
- প্রতিদিন অল্প কিছু সময় হাটাহাটি করা বা ব্যায়াম করা
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ঘুমাতে যাওয়া এবং সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠার অভ্যাস করা। ঘুমানোর আগে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা বা টিভি না দেখা
- ইতিবাচক চিন্তা করা- নেতিবাচক বা নেগেটিভ চিন্তগুলোকে মন থেকে দুর করতে হবে, সুস্থ্য এবং ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে হবে
- আনন্দদায়ক কাজের মধ্যে সময় কাটানো
- পরামর্শ ও চিকিৎসার জন্য বিষেশজ্ঞের নিকট যাাওয়া
৪. বিষন্নতায় ভুগছে এমন কিশোর-কিশোরীরদেরকে সেবাদানকারী কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
উত্তর: মানসিকভাবে বিষন্নতায় ভুগছে এমন কিশোর-কিশোরীদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সেবাদানকারী অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন সেবাদানকারী কাউন্সেলিং সহায়তা সেবা দেয়ার সময় এমন একটি নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করেন, ‘সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করবেন’- মর্মে এমন বিশ্বস্ততা অর্জন করেন যে মানসিকভাবে বিষন্ন কিশোর-কিশোরী তার ভিতরে চেপে রাখা কষ্ট, অনুভ‚তি, অভিজ্ঞতা, আচরণ কোনো কষ্টের সাথে জড়িত বিষয় অনায়াসে প্রকাশ করতে পারে। বার বার কাউন্সেলিং এর ফলে বিপর্যস্ত সে ক্রমান্বয়ে স্বাভাবিক ও সুস্থ জীবনে ফিরে আসে, স্বাভাবিক কর্মকান্ডে অভ্যস্ত হয় এবং দক্ষতার সাথে সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম হয়। কখনো কখনো কোনো ব্যক্তির মানসিকভাবে বিপর্যস্ততা এমন পর্যায়ে চলে যায় যে শুধু সেবাদানকারীর সহযোগিতায় তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কষ্টকর। তখন অবশ্যই তাকে প্রশিক্ষিত মনোসামাজিক সহায়তাকারীর শরণাপন্ন হতে হয়।
মাদকাসক্ত
১. কিশোর-কিশোরীরা কেন মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে?
উত্তর: কৈশোরে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে উঠার পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে, যেমন- পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষার অভাব, মাদক গ্রহণকে ট্রেন্ড বা ফ্যাশন হিসেবে দেখা, শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের অভাব। বিভিন্ন কারণে একজন সন্তান পরিবার থেকে নৈতিক শিক্ষা পায় না। এ বয়সে ছেলে-মেয়েদের নতুন কিছু করার, ভিন্ন কিছু করার আগ্রহ থাকে। এই নতুনত্ব বা ভিন্নতাকে আপন করে নিতে দ্বিধাবোধ করে না। এভাবেই মাদকাসক্ত বন্ধু বা বড় ভাই বোনদের দেখে বিষয়টাকে ফ্যাশন বা ট্রেন্ড হিসেবে নেয় এবং আসক্ত হয়ে যায়। অনেক সময় ছেলে-মেয়েরা নিজের পছন্দ অনুযায়ী পড়াশুনা করতে না পারলে বা মনের মতো কিছু করতে না পারলে বা মনের মত কিছু না পেলে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মাদকের দিকে ঝুঁকে যায়।
২. কিশোর/কিশোরী কিভাবে নিজেকে মাদকাসক্ত (মদ, তামাক, হেরোইন, ইয়াবা) থেকে দূরে রাখতে পারে?
উত্তর: কিশোর-কিশোরীদের প্রথমে বুঝতে হবে যে, মাদক গ্রহণ কোনভাবেই স্বাস্থ্যের জন্য ভাল নয় এবং এটা ধীরে ধীরে মানুষের শারিরীক ও মানসিক শক্তিকে নষ্ট করে দেয়। যে সকল বিষয় মাদক গ্রহণে আকৃষ্ট করতে পারে, তা থেকে দুরে থাকতে হবে। যেমন- মাদকাসক্ত বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মেলামেশা না করা, যেখানে মাদক পাওয়া যায় সেখানে না যাওয়া। অবসর সময় এমন কিছু করা যাতে মাদকের প্রতি চিন্তা না আসে, যেমন-ভালো বই পড়া, ভালো কোন সিনেমা দেখা, খেলাধুলা করা, সামাজিক কোন কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত থাকা, বাব-মাকে বা পরিবারের লোকজনকে কাজে সাহায্য করা, নিজের সমস্যাগুলো বন্ধুদের বা কাছের কাউকে বলা। ভাবতে হবে জীবনটা অনেক বড় এবং অনেক কিছু করার সুযোগ আছে।
৩. মাদকাসক্ত হয়েছে এমন কিশোর-কিশোরীরদেরকে সেবাদানকারী কিভাবে সাহায্য করতে পারে?
উত্তর: মাদক থেকে মুক্তি পেতে দরকার সকলের সহযোগিতা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাবা-মা তার সন্তান যে মাদকাসক্ত তা মেনে নিতে চান না এবং সন্তানকে বকাঝকা, মারপিট করে, ভয় দেখিয়ে মাদক থেকে দুরে রাখার চেষ্টা করেন। অভিভাবকরা মাদকাসক্তির চিকিৎসা কি সেটা অনেক সময় বুঝতে পারেন না। একজন সেবাদানকারী এ বিষয়ে অভিভাবককে সাহায্য করতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে মাদকাসক্তির চিকিৎসা মানেই একটি সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুল এবং সমন্বিত ব্যবস্থাপনা। মাদক গ্রহণ করার পিছনে কি কারণ সেটাও দেখতে হয়। এইসকল বিষয়গুলো অভিভাবককে অনুধাবন করতে হবে। ব্যক্তিবিশেষে কাউন্সেলিং, মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসার প্রয়োজন করতে হবে।