Module - 7
বুলিং/সাইবার হয়রানী, যৌন হয়রানি এবং
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও কিশোরকিশোরী
বুলিং বলতে কাউকে মানসিক বা শারীরিকভাবে হেনস্তা করা বোঝায়। কাউকে অপমান, অপদস্ত করা, কারো সামনে কাউকে হেয় করা, এগুলোই বুলিং। অনেক সময় কাউকে অপদস্ত করাকে অনেকে মজা হিসেবে দেখে, কিন্তু যে ব্যক্তির সাথে মজা করা হয়, তিনি বুলিং এর শিকার হন। উদাহরণ স্বরূপ কারো গায়ের রং, শরীরের গঠন, উচ্চতা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মজা করা, কাউকে আপত্তিকর ভাষায় ডাকা ইত্যাদি।
- সাইবার বুলিং/সাইবার হয়রানী
সাইবার বুলিং/সাইবার হয়রানী বলতে বোঝায় কাউকে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের সহায়তায় বুলিং করা। এটাকে আজকাল অনলাইন বুলিংও বলা হয়। কিশোর বয়সের ছেলেমেয়েদের মধ্যে আজকাল এই সমস্যাটা খুব বাড়ছে। এটা হতে পারে মিথ্যা প্রচারনামূলক, হুমকি, যৌন হয়রানী করা, যার পেছনের উদ্দেশ্য থাকে কারো ক্ষতি করা।
২০১৬ সালে বিশ্বখ্যাত টেলিনর গ্রপের করা এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, বাংলাদেশের স্কুলে যাওয়া শিশুদের প্রায় ৪৯% নানা ধরণের বুলিংয়ের শিকার হয়। সবচেয়ে আশংকার ব্যাপার হলো, এর মধ্যে ২৯% শিশু সাইবার বুলিংয়ের কারণে বিষন্নতায় ভোগে। সূত্র :
(https:/ww/w.dhakatribune.com/feature/tech/2017/02/07/survey29asianchildrendepressedduecyberbullying)
-
- ফেসবুক
- হোয়াটস্ অ্যাপস
- ইমো
- ভাইবার
- ম্যাসেন্জার ইত্যাদি
- সাইবার বুলিংয়ের ফলে মানসিক প্রভাব
১. হতাশা
২. উদ্বেগ
৩. ঘুম ও খাদ্যাভাসে পরিবর্তন
৪. নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার কথা বলা
৫. অন্যদের থেকে নিজেকে বিচ্ছিন করে রাখা
৬. আত্মহত্যার ঝুঁকি
- সাইবার বুলিং প্রতিরোধের উপায়
১) অপরিচিত কারও সাথে অনলাইনে বন্ধুত্ব বা অন্য কোন সম্পর্কে না জড়ানো
২) অপরিচিত কারও সাথে অনলাইনে কোন ধরণের ব্যক্তিগত মেসেজ দেয়া থেকে বিরত থাকা
৩) বিরক্তিকর ব্যক্তিকে ব্লক করে দেওয়া
৪) সাইবার বুলিং নিয়ে বিশ্বস্ত কাউকে জানানো
৫)অন্যান্য শিক্ষার্থী, শিক্ষকশিক্ষিকা এবং স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো এবং সাইবার বুলিং প্রতিরোধে নিয়মনীতি প্রণয়ন করা
৬) সাইবার বুলিং প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়ানো
যৌন হয়রানি হলো অযৌক্তিক এবং অস্বস্তিকর যৌন আচরণ বা যৌন মনোযোগ যা আপত্তিকর, অপমানজনক বা ভীতিজনক। যেমন যৌন বিষয় সম্পর্কিত যে কোন মন্তব্য করা, অশ্লীল ফোনকল করা, শারীরিক সংর্স্পশ ইত্যাদি নিম্নোক্ত পরিস্থিতিতে যৌন হয়রানি হতে পারে:
- স্কুল
- কলেজ
- কাজের ক্ষেত্র
- পরিবহণ
- অভিনয়ের ক্ষেত্র
- সঙ্গীত
- ব্যবসা ইত্যাদি
যৌন হয়রানিকারী একজন সহকর্মী, অভিভাবক বা আইনি অভিভাবক, আত্মীয়, শিক্ষক, ছাত্র, অথবা বন্ধ ও হতে পারেন। তিনি যে বিপরীত লিঙ্গেরই হতে হবে এমন না, অপরাধী এবং VICTIM বা অপরাধের শিকার ব্যক্তি যে কোন লিঙ্গের হতে পারেন।
একটি গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা দিয়েছে -
৯৪% মহিলা পাবলিক পরিবহণে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন, তারা আরও বলেন ভিকটিমদের মধ্যে ৮১% নীরবে প্রতিক্রিয়া করে এবং ৭৯% শুধু সহ্য করে নেয় (GISMA Business school, BRAC, ২০১৮) সমগ্র দেশে মোট ৮১৮ জন মহিলা ধর্ষণ হয়েছে তার মধ্যে ৪৭ জনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
নিম্নে যৌন হয়রানির কতগুলো ধরণ দেওয়া হলো-
১. শারীরিক যৌন হয়রানি
শারীরিক যৌন হয়রানি বলতে অপ্রত্যাশিত এবং আপত্তিকর শারীরিক স্পর্শকে বুঝানো হয়। যেমন অনুমতি ছাড়া তাকে স্পর্শ করা, হঠাৎ জড়িয়ে ধরা, এবং অন্যান্য যে কোন শারীরিক সংস্পর্শ করা ইত্যাদি।
২. মৌখিক যৌন হয়রানি
ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে কোন অপমান, অসম্মানজনক কথা বলা বা যৌন মন্তব্য করা যেমন যৌন বিষয় সম্পর্কিত যে কোন মন্তব্য করা, যৌনতা বিষয় সম্পর্কে অযাচিত প্রশ্ন করা, যৌন মন্তব্যের মাধ্যমে অপমান করা, যৌন উদ্দীপক কৌতুক বলা এবং যৌন মিলনের প্রস্তাব দেওয়া।
৩. আবেগীয়/মানসিক যৌন হয়রানি
যে সকল যৌন হয়রানি কোন ব্যক্তিকে আবেগীয়/মানসিক ক্ষতিগ্রস্থ করে তোলে তাকে আবেগীয়/মানসিক যৌন হয়রানি বলে। যেমন অন্যের কাছে গুজব ছড়ানো, ভিডিও এবং অডিও রের্কড ধারণ করে তা নিয়ে ব্ল্যাকমেল করা, বাজে মন্তব্য করা ইত্যাদি করা যার ফলে ব্যক্তির মধ্যে রাগ, কষ্ট, হতাশা, বিরক্তি ইত্যাদি দেখা দেয়।
৪. সাইবার যৌন হয়রানি
সাইবার যৌন হয়রানি হলো মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যক্তিকে অকারণে হয়রানি করা যেমন যৌন বার্তা এবং এ সম্পর্কিত গান পাঠানো, ভিডিও দেখানো, অশ্লীল ফোন কল করা, অন্যের ফেসবুকে আপত্তিকর ছবি, ভিডিও পোস্ট করে হয়রানি করা ইত্যাদি।
এছাড়াও
-
- কুদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা
- অযৌক্তিক এবং আপত্তিকর উপাদান প্রদর্শন করা (পোষ্টার, কার্টুন ইত্যাদি)
- নানা ধরনের আপত্তিকর যৌন অঙ্গভঙ্গি প্রকাশ করা
- অশ্লীলভাবে নিজেকে প্রকাশ করা বা যৌন নির্যাতন করা
যৌন হয়রানির ফলে একজন ব্যক্তির মধ্যে নানা ধরনের নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিতে পারে-
-
- মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা বিষন্নতাবোধ হওয়া
- সবকিছু থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া
- সম্পর্কের অবনতি
- বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পায়
- আত্মসম্মানবোধ এবং আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া
- মনমরা থাকা, মাথা ব্যাথা এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথা হওয়া
- পড়াশোনায় মনোযোগ ও আগ্রহ কমে যাওয়া এবং পরীক্ষায় খারাপ ফলাফল করা
- আত্মহত্যা বা নিজের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি করা ইত্যাদি
- যৌন হয়রানির প্রতিরোধ এবং প্রতিকার ব্যবস্থা
- প্রথমে ভিকটিমের কথা মনোযোগ দিয়ে এবং নিরপেক্ষভাবে শুনতে হবে, তাকে সহমর্মিতা দেওয়া এবং তার কথা গোপন রাখা
- দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া
- ব্যক্তি যখন যৌন হয়রানির শিকার হবেন, তখন শিক্ষক তার অনুমতি নিয়ে তার পরিবারের সাথে আলোচনা করতে পারেন, প্রয়োজনবোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিতে পারেন
- শিক্ষক তাকে বলতে পারেন তার পরিবার এবং অন্যান্যদের মধ্য থেকে বিশ্বাসযোগ্য কারও সাথে তার ঘটনাটি শেয়ার করা
- শিক্ষক তাকে ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত ডায়েরী লিখতে বলতে পারেন যেকোন প্রমাণ সংরক্ষণ করা যেমন মেসেজ, সামাজিক মাধ্যমের মন্তব্য এগুলো সংরক্ষণ করে রাখা যা পরবর্তীতে প্রমাণস্বরূপ কাজে লাগতে পারে অন্যদের থেকে তথ্য ও উপদেশ নিতে বলা
- প্রচলিত প্রানুযায়ী অভিযোগ করা
- নিজেকে দোষ না দেয়া
- আত্মবিশ্বাসের সাথে “না” বলতে শিখান
- অপরাধীর সাথে কথা বলা এবং তাকে বোঝান
- কেউ যৌন হয়রানির শিকার হলে শিক্ষার্থীদেরকে একে অপরকে সাহায্য করতে বলা
- প্রয়োজনে কাউন্সেলরের কাছে রেফার করা
১) শিক্ষার্থীদেরকে যৌন হয়রানি সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলা
২) যারা এ ধরনের কাজ করতে পারে তাদের চিহ্নিত করা
৩) একা একা কোথাও না যেয়ে দলে যাওয়ার চেষ্টা করতে বলা
৪) আগ বাড়িয়ে কেউ আপন ভাব দেখালে বা সাহায্য করতে চাইলে তা ভেবে চিন্তে গ্রহণ করা ইত্যাদি
১) অযৌক্তিক ও অস্বস্তিকর যৌন আচরণ বা যৌন মনোযোগ ব্যক্তির জন্য আপত্তিকর, অপমানজনক ও ভয়ের।
২) নানা ধরনের যৌন হয়রানির মধ্যে শারীরিক যৌন হয়রানি, মৌখিক যৌন হয়রানি, সাইবার যৌন হয়রানী, মানসিক যৌন হয়রানি অন্তর্ভূক্ত। যৌন হয়রানির স্বীকার হওয়া ব্যক্তি নিজেকে গুটিয়ে নেয়, মানসিক চাপ, উদ্বেগ ও বিষন্নতায় ভোগে।
৩) যৌন হয়রানি রোধ করতে হলে যৌন আচরণ প্রদর্শনকারী ব্যক্তির প্রতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ,আত্মবিশ্বাসের সাথে “না” বলতে শিখা, নিজেকে দোষারোপ না করা ইত্যাদি অনুশীলন করতে হবে।
- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও কিশোরকিশোরী
বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও কিশোরকিশোরী বলতে সাধারণত এমন শিশুদের বোঝানো হয় যাদের বিশেষ মনোযোগ ও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজন থাকে যা অন্য শিশুদের থাকেনা। এ চাহিদাগুলো শারীরিক, মানসিক, আচরণগত বা শেখার ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধীতা থাকে। অটিজম, সেরিব্রাল পলসি, ডাউন সিন্ড্রোম, অন্ধত্ব, এ ডি এইচ ডি ইত্যাদি বিভিন্ন রকম বিশেষ চাহিদা সম্পনড়ব শিশু ও কিশোরকিশোরী হয়ে থাকে।
- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু ও কিশোরকিশোরীদেরকে সহায়তার উপায়
১) ভুল করলে ক্ষমার চোখে দেখা
২) সাধারন জ্ঞানের ব্যবহার করা
৩) নমনীয় হওয়া
৪) কোন কিছুতে বার বার পরিবর্তন না করা
৫) সহমর্মি হওয়া
৬) ইতিবাচক ব্যবহার করা
৭) প্রশংসা করা
৮) দৃষ্টিগত, শ্রবনগত ও স্পর্শগত সংবেদন ব্যবহার করে বুঝতে সহায়তা করা
৯) পরিকল্পনা মাফিক আগানো
অটিজম একটি বিকাশজনিত ব্যাধি। এটা সামাজিক যোগাযোগে ব্যাঘাত ঘটায় এবং আচরণগত পার্থক্য ও পরিলক্ষিত হয়।
১. সামাজিকআবেগীয় ভাবের আদানপ্রদান করতে অপারগ হয়। দৈনন্দিন কথপোকথনে অংশগ্রহণ করতে পারে না: তাই কাউকে কিছু শেয়ার করার আগ্রহ তৈরি হয় না, আবেগ প্রকাশ করে না, কোন কিছুতে কোন প্রতিক্রিয়া ও প্রকাশ করে না।
২. অমৌখিক কোন শারীরিক ভাষা প্রদর্শনে অক্ষম। যেমন চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না, কোন ধরনের কোন মুখভঙ্গি প্রদর্শন করে না।
৩. সম্পর্ক তৈরি করা, রক্ষা করা ও বুঝতে পারার দক্ষতা থাকে না। যেমন বিভিন্ন সামাজিক পরিবর্তনে প্রয়োজনে অনুযায়ী আচরণ করতে না পারা। সমবয়সীদের প্রতি কোন আগ্রহ বোধ করে না, তাই তাদের কোন বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে না।
৪. বারবার একই ধরনের শারীরিক অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন করে, অথবা বারবার একই কথা বলে।
৫. দৈনন্দিন রুটিনের কোন পরিবর্তন আসলে মেনে নিতে পারে না।