Module - 9
জেন্ডার/জেন্ডার বৈষম্য
১) জেন্ডার/লিঙ্গ
নারী এবং পরুষের মধ্যকার যে সামাজিক পার্থক্য রয়েছে, যা জন্মের পর থেকে শুরু হয়, যা মানুষের বা সমাজের সৃষ্টি, যা একেক যায়গায় একেক রকম এবং ইচ্ছা করলে অবশ্যই পরিবর্তন করা যায় তাকেই বলে নারী এবং পুরুষের সামাজিক পরিচিতি বা জেন্ডার।
২) সেক্স
নারী এবং পুরুষের মধ্যে এক ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শারীরিক বা দৈহিক। এটা স্রষ্টার সৃষ্টি, যা কোনভাবেই পরিবর্তন করা যায়না এবং পৃথিবীর সব জায়গায় একইরকম। এই দৈহিক বা শারীরিক বৈশিষ্ট্যকেই সেক্স বলে।
৩) তৃতীয় লিঙ্গ
১০ থেকে ১৯ বছর এমন একটা সময়কাল যখন ছেলে ও মেয়ের মধ্যে পার্থক্যগুলো স্পষ্ট হতে থাকে। এ সময় থেকেই আশা করা হয় যে ছেলেরা ছেলেদের মত ও মেয়েরা মেয়েদের মত আচরণ করবে। স্বাভাবিকভাবে যারা যথেষ্ট মেয়েলী বা পরুষালী নয় তারা এসময় থেকে নিজেকে ভিন্ন এবং অনুপযুক্ত ভাবতে শুরু করে। যদিও স্বাভাবিকভাবে সকলেই কেবল বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়াকে সঠিক বলে ধরে নেয়, তবে এ সময় অনেকেই সমলিঙ্গ বা উভয় লিঙ্গেও প্রতিও আকৃষ্ট হতে পারে, যা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক একটি আচরণ। আমরা মনে করি আমাদের সমাজে দুইটি মাত্র জেন্ডার নারী আর পরুষ। কিন্তু সমাজে অনেকেই আছে যারা এই দুই গন্ডির বাইরে গিয়ে নিজেকে দেখে। এদেরকে আমরা ট্রান্সজেন্ডার বলি।
একই লিঙ্গের সদস্যদের মধ্যে যৌন সম্পর্ক স্থাপনকে সমকামীতা বলা হয়। সমকামীরা একই লিঙ্গের প্রতি যৌন আকর্ষ বোধ করে এবং যৌন আচরণ করে। পরুষদের মধ্যে সমকামী প্রবণতা অধিক হারে পরিলক্ষিত হলেও, মেয়েদের মধ্যেও এরূপ প্রবণতা বিরল নয়। ফ্রয়েডের মতে, কামশক্তির সংবন্ধনই (Fixation of Libido) সমকামী প্রবণতার জন্য দায়ী। সমকামীদের মধ্যে যারা বিপরীত লিঙ্গের ভূমিকা গ্রহণ করে, তারা অনেক সময় প্রকাশ্যভাবে বিপরীত লিঙ্গের সাজসজ্জা ও হাবভাব অনুকরণ ও প্রদর্শন করে।
জেন্ডার বৈষম্য বলতে পরিবার ও সমাজ কর্তৃক তৈরীকৃত বিভিন্ন পার্থক্যগুলোকে বোঝানো হয়ে থাকে যা নারী-পুরুষের মাঝে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতে বৈষম্যের সৃষ্টি করে। বিভিন্ন পরিবার ও সমাজের এই বৈষম্য কিন্তু তাদের আইনসিদ্ধ বা নীতিগত কিংবা নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এই বৈষম্য সমানাধিকার অর্জনের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে।
আমাদের সমাজে নারী ও পুরুষ সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাসমূহ:
মহিলা |
পুরুষ |
প্রকৃত অর্থে |
মহিলারা দুর্বল হবে । |
পুরুষ শক্তিশালী হবে । |
নারী পুরুষের চেয়ে শক্তিশালী হতে পারে । |
মহিলারা কম আত্মবিশ্বাসী হবে । |
পুরুষরা আত্মবিশ্বাসী হবে । |
আত্মবিশ্বাস লালন পালন ও অভিজ্ঞতার উপর নির্ভর করে। |
মহিলারা হবে সিদ্ধান্ত পালনকারী । |
পুরুষরা হবে সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী । |
পুরুষের মত নারীও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী।
আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী একজন নারী।
|
মহিলারা লাজুক হবে । |
পুরুষরা কঠিন হবে । |
লজ্জা ও বিনয় সকল মানুষের জন্য প্রয়োজন। |
মহিলারা ঘরের কাজ করবে
|
পুরুষরা বাইরের কাজ করবে
|
সবাই মিলে কাজ করতে হবে
|
মহিলারা ভীতু হবে
|
পুরুষরা সাহসী হবে
|
উভয়ের জন্য সাহস গুরুত্বপূর্ণ
|
মহিলারা পরিবারের বোঝা
|
পুরুষরা পরিবারের সম্পদ
|
শিক্ষিত ও কর্মক্ষম নারী ও পুরুষ সকলেই পরিবারের সম্পদ
|
-
- গতানুগতিক পিতৃতান্ত্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা
- পর্দা ব্যবস্থার অপব্যাখ্যা ও ভ্রান্ত ধারণা
- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারীর সীমিত অংশগ্রহণ
- মেয়েদের শিক্ষার প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি
- নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব
-
- সমাজের প্রতি ক্ষোভ তৈরী
- অপুষ্টি ও রক্তশূণ্যতায় ভোগা
- যৌতুকের শিকার হওয়া
- নিপীড়ণ ও নির্যাতনের শিকার হওয়া
- হীনমন্যতা
- বিষন্নতা
- রাগ
- আকস্মিক মেজাজের পরিবর্তন
- উদ্বিগ্নতা
- অসহায়বোধ
- জেন্ডার বৈষম্য দূর করার জন্য করণীয়
-
- ছেলে-মেয়েকে সমান চোখে দেখা
- সকলকে লিঙ্গ বৈষম্য সম্পর্কে সচেতন করা
- মেয়েদের লেখাপড়া, প্রতিষ্ঠা ও স্বাবলম্বী হওয়ার ব্যপারে পরিবার, সমাজ ও সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপ নিতে হবে
- কিশোর-কিশোরী একে অপরকে সমান চোখে দেখা দরকার এবং সমান মর্যাদা ও সম্মান দেওয়া দরকার
- কেউ বৈষম্যমূলক আচরণ করলে তাকে এর প্রভাব ও ফলাফল সম্পর্কে জানাতে হবে এবং এ ধরনের আচরণ না করার জন্য অনুরোধ করা হবে
- সামাজিক অন্যায় আচরণ যেমনঃ মেয়েদের অল্প বয়সে বিয়ে দেওয়া, যৌতুক প্রথা মেনে নেওয়া, মেয়েদের পড়াশুনা করতে না দেওয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রয়োজন
নারী ও পুরুষের সামাজিক পরিচয়কে “জেন্ডার” বলা হয়। নারী এবং পুরুষের মধ্যে শারীরিক বৈশিষ্ট্যকে “সেক্স” বলে। সমাজে সাধারনত পুরুষ ও নারী এই দুই ধরনের জেন্ডার আছে। এই দুই গন্ডির বাইরে যারা আছে তারাই “ট্রান্সজেন্ডার” নামে পরিচিত। পুরুষ নারীর প্রতি এবং নারী পুরুষের প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করবে এরকমটাই স্বাভাবিক বলে ধরা হয় তবে যারা সম লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হয় তাদেরকে সমকামী বলা হয়। সমকামীদের মধ্যে যারা বিপরীত লিঙ্গের ভূমিকা পালন করে তারা অনেক সময় লোকসম্মুখে বিপরীত লিঙ্গের সাজ-পোষাক ধারন করে থাকে। সমাজ কর্তৃক প্রদত্ত নারী-পুরুষের পার্থক্যগুলো যখন কোন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বৈষম্যের কারণ হয়ে দাড়ায় তখন তা “লিঙ্গ বৈষম্যে”র সৃষ্টি করে। সমাজে নারীকে দুর্বল, লাজুক, ভীতু আর পুরুষকে শক্তিশালী, আত্মবিশ্বাসী, সাহসী হিসেবে দেখা হলেও ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নারী কখনোই পুরুষের তুলনায় কম পারদর্শী ছিল না বরং তারা সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে অংশগ্রহণ করে এসেছে। বৈষম্য দূরীকরণের জন্য ছেলে-মেয়েকে সমান চোখে দেখা এবং সচেতনতা তৈরী করা জরুরী।