Module- 1
কৈশোরকাল ও কৈশোরকালীন পরিবর্তনসমূহ
কৈশোরকাল ও বয়ঃসন্ধিকাল
- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, ১০-১৯ বছর হচ্ছে কৈশোরকাল। শৈশব ও যৌবনের সন্ধিক্ষণে দ্রুত ও গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়কালই কৈশোর হিসেবে ধরা হয়। এটি জীবনের এমন একটি সময় যখন মানুষ শিশু বা বয়স্ক, কোনোটাই নয়। কৈশোরকালে মানুষের জীবনে অনেক রকম শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন হয়। এছাড়াও কৈশোরকালে সামাজিক প্রত্যাশা ও ধারণা পরিবর্তিত হয়। এই সময়ে সূত্র ও বিমূর্ত বিষয় নিয়ে চিন্তা করার ক্ষমতা ও আত্ম-সচেতনতা তৈরি হয় এবং সমাজ তার কাছে মানসিক পরিপক্বতা আশা করে।
- বয়ঃসন্ধিকাল হচ্ছে কৈশোরকালীন শারীরিক পরিবর্তনের প্রক্রিয়া যখন কিশোর-কিশোরীরা যৌন পরিপক্বতা লাভ করে। বয়ঃসন্ধি শারীরিক পরিবর্তনসমূহকে নির্দেশ করে এবং কৈশোরকাল শৈশব ও যৌবনে মানসিক ও সামাজিক পরিবর্তনসমূহকে তুলে ধরে।
কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন
মাসিক /ঋতুস্রাব
মাসিক একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নারী গর্ভধারণ/ সন্তান জন্মদানের জন্য প্রস্তুত হয়। প্রতিমাসে যোনিপথ দিয়ে মেয়েদের যে রক্তস্রাব হয় তাকে মাসিক ঋতুস্রাব বলে।
- ঋতুস্রাব সাধারণত ৯-১৪ বৎসর বয়সের মধ্যে শুরু হয় এবং ৪৫-৫৫ বৎসর পর্যন্ত প্রতিমাসে একবার করে হতে থাকে
- প্রতিমাসেই ১-৭ দিন পর্যন্ত রক্তস্রাব হয়ে থাকে। প্রথম ১-৩ দিন একটু বেশি পরিমাণ রক্ত গেলেও পরবর্তী দিনগুলোতে রক্তস্রাবের পরিমাণ কমে আসে।
বয়ঃসন্ধির সময় থেকে মাসিক শুরু হয়। জরায়ুর ভিতরের আবরণের সবচেয়ে বাইরের আবরণটি হরমোনের প্রভাবে প্রতিমাসে বিচ্ছিন্ন হয়, তখন এর নীচে ছোট ছোট রক্তনালীগুলো উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং রক্তপাত হয়। এই রক্ত ও জরায়ুর বাইরের আবরণের ছেঁড়া ছেঁড়া অংশ যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে। সাধারণত প্রতিমাসে ২১-৩৫ দিন অন্তর অন্তর যোনিপথে এই রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে এবং তা ১-৭ দিন পর্যন্ত হতে পারে।
অতিরিক্ত তথ্য
মাসিক ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনায় বাবা-মার ভূমিকা:
- কৈশোরের শুরুতে কিশোরীকে মাসিক ঋতুস্রাব ও এর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তথ্য বা শিক্ষা দেয়া
- কোনো সমস্যা হলে যেন বাবা-মার সাথে আলোচনা করে সেভাবে তাকে উদ্বুদ্ধ করা
- মাসিক ঋতুস্রাবকে ভয় না পেয়ে সহজভাবে নিতে শিক্ষা দেয়া
- এই সময়ে স্কুলে যাওয়া, খেলাধুলা করাসহ সব কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে উৎসাহ দেয়া
- মাসিক ঋতুস্রাবের সময়সহ কৈশোরে কিশোরীকে পুষ্টিকর খাবার খেতে উদ্বুদ্ধ করা
মাসিক ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা:
- মাসিক ঋতুস্রাব ব্যবস্থাপনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের কী করা উচিত, সেটা স্বাস্থ্যসেবাদানকারী তাদের জানাতে পারেন বা আলোচনা করতে পারেন
মাসিক ঋতুস্রাবকালীন সময়ে কিশোরী/নারীদের যা করা উচিত
- মাসিককালীন সময়ে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার প্রচুর পরিমাণে খাওয়া প্রয়োজন। কারণ তাদের দেহ থেকে প্রতিমাসে রক্তক্ষরণ হয়। এ ঘাটতি পূরণের জন্য আমিষ (ডাল, সিমের বীচি, বাদাম, দুধ এবং দুধজাতীয় খাদ্য, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি); আয়রন (গাঢ় সবুজ শাকসবজি ও ফল, কলিজা ইত্যাদি); ক্যালসিয়াম (দুধ ও দুধজাতীয় খাদ্য, ছোটমাছ ইত্যাদি); ভিটামিন সি (লেবু, আমলকি, পেয়ারা ইত্যাদি) খেতে হবে।
- প্রতিদিন ভালোভাবে গোসল এবং প্রজনন অঙ্গ পানি ও সাবান দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
- মাসিকের সময় ঘরে তৈরি পরিষ্কার ন্যাপকিন/কাপড় অথবা স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করতে হবে। কাপড় ব্যবহার করলে ব্যবহারের পর কাপড়টি সাবান ও পানি দিয়ে ধুতে হবে এবং সূর্যের আলোতে শুকিয়ে নিয়ে পরিষ্কার প্যাকেটে পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য রেখে দিতে হবে।
- রক্তস্রাবের পরিমাণ অনুযায়ী স্যানিটারি ন্যাপকিন বা কাপড় দিনে অন্ততপক্ষে ৪ থেকে ৬ বার বদলাতে হবে। একটি প্যাড একবারই ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর তা কাগজে মুড়িয়ে ডাস্টবিনে/ময়লা ফেলার নির্দিষ্ট স্থানে/গর্তে ফেলতে হবে।
- মাসিকের সময় স্বাভাবিক হাঁটাচলা ও হালকা ব্যায়াম করতে হবে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে।
- কৌষ্ঠকাঠিন্য এড়াতে প্রচুর পানি, শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে হবে।
- মাসিক বন্ধ থাকলে, একমাসে ২/৩ বার মাসিক হলে, প্রচুর রক্তক্ষরণ বা প্রচন্ড ব্যথা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলতে হবে।
মাসিকের অস্বাভাবিকতা ও এর ব্যবস্থাপনা
যদি কোনো কিশোরীর মাসিক চক্রে নিম্নের যেকোনো একটিও দেখা যায় তবে তাকে মাসিকের অস্বাভাবিকতা বলা হবে।
- মাসিক বন্ধ হয়ে গেছে অথবা একমাসে ২/৩ বার মাসিক হচ্ছে অর্থাৎ নিয়মিত মাসিক হচ্ছে না
- মাসিকের সময় প্রচুর রক্ত যায়
- দু’টি মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত যাওয়া
- দুর্গন্ধযুক্ত রক্ত যাওয়া বা জ্বর থাকা
- মাসিকের সময় তলপেটে অনেক ব্যথা হওয়া
ব্যবস্থাপনা
- মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়া গর্ভধারণের লক্ষণগুলোর একটি। সেক্ষেত্রে উপযুক্ত পরীক্ষা করে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী কিশোরীকে গর্ভজনিত সেবা দেবেন।
- এছাড়াও অনিয়মিত মাসিক এবং মাসিকের সময় বেশি রক্ত যাওয়া ও ব্যথা হওয়া প্রজননতন্ত্রের বা হরমোনজনিত রোগের লক্ষণ। তাই কিশোরীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে রেফার করতে হবে।
- কিশোরীর মাসিকের সময় বেশি ব্যথা হলে ব্যথানাশক বড়ি (যেমন- এন্টিস্পাজমোডিক বা এনএসএআইডি জাতীয় ওষুধ) দিতে হবে।
- চিকিৎসার পাশাপাশি কিশোরীকে পুষ্টিকর/স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে উৎসাহিত করতে হবে।
কিশোরদের স্বপ্নে বীর্যপাত
ছেলেদের সাধারণত বয়ঃসন্ধির সময় বা ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়স থেকে বীর্যথলিতে বীর্য তৈরি শুরু হয়। অতিরিক্ত বীর্য স্বাভাবিক নিয়মে শরীর থেকে বেরিয়ে আসে। এটাই হচ্ছে বীর্যপাত। ঘুমের মধ্যে এই বীর্য বেরিয়ে আসাকে বলা হয় স্বপ্নে বীর্যপাত যা সাধারণত স্বপ্নদোষ হিসেবে পরিচিত।
স্বপ্নে বীর্যপাত ছেলেদের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, এটি কোনো রোগ নয়। কারো স্বপ্নদোষ না হওয়াও কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার নয় এবং এর অর্থ এই নয় যে, তার বীর্য ঠিকমতো তৈরি হচ্ছে না। এজন্য ‘জীবন নষ্ট হয়ে গেছে’ ভেবে মন খারাপ করা কিংবা চিকিৎসার জন্য কবিরাজ/হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত নয়।
কিশোরদের স্বপ্নে বীর্যপাতের ব্যবস্থাপনা
- ছেলেদের স্বপ্নে বীর্যপাত হলে শরীর পরিষ্কার করে কাপড় পরিবর্তন করতে হবে।
- বিষয়টি নিয়ে মন খারাপ না করে নিজেকে বিভিন্ন ধরনের কাজে (পড়াশোনার বাইরে ভালো বই পড়া, খেলাধুলা/ব্যয়াম করা, উন্নয়ন/সেবামূলক কাজ করা, ধর্মীয় কাজ করা ইত্যাদি) সম্পৃক্ত করতে হবে।
- প্রতিদিন গোসলের সময় যৌনাঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে। যদি পেনিসের অগ্রভাগে বাড়তি চামড়া থাকে, সেটাও পরিষ্কার করতে হবে।
- প্রতিদিন পরিষ্কার আন্ডারওয়্যার ব্যবহার করতে হবে।
- যৌনাঙ্গ বা মলদ্বারের ভেতরে কোনো ধরনের অপরিষ্কার বস্তূ প্রবেশ করানো যাবে না।
- অপরিষ্কার হাতে কখনই নিজের যৌনাঙ্গ ধরা যাবে না।
- কৈশোরকালীন বৃদ্ধির কারণে এসময় ছেলেদের প্রচুর পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে।